আড়ালে তার চতুর্থ ইনিংস ভাসে
আফগানিস্তানের বিপক্ষেও বাংলাদেশ নেমেছে চার স্পিনার নিয়ে। কোনো পেসার নেই। ৩ উইকেটে ৭৭ রান নিয়ে প্রথম দিনের চা বিরতিতে গেছে আফগানরা। প্রথম ইনিংস আফগানদের যত কমে সম্ভব আটকে ফেলতে হবে। একই উইকেটে যে দ্বিতীয় আর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করতে হবে, যখন উইকেটে স্পিন ধরবে আরও বেশি! এখনই চতুর্থ ইনিংসের চ্যালেঞ্জটা কারও কারও চোখে ভাসতেই পারে
জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ভারতীয় কিউরেটর প্রবীণ হিঙ্গানিকার কাল বিকেলে একটু হাত ঘুরিয়ে পরখ করছিলেন, ‘চাহিদাপত্রে’ যা ছিল, সে অনুযায়ী উইকেট বানানো হয়েছে কি না। ২৪ বছর আগে পেশাদার ক্রিকেটকে বিদায় জানানো বিদর্ভ রাজ্য দলের সাবেক অধিনায়ক এই বয়সেও কিছু ডেলিভারি ছুড়ে পড়ন্ত বিকেলে যে শার্প টার্ন পেলেন, তাতেই বোঝা গেল, জহুর আহমেদের উইকেটে ঘূর্ণিজাদু দেখাতে খুব একটা অসুবিধা হবে না স্পিনারদের।
কন্ডিশন, উইকেটের চরিত্র আর নিজেদের শক্তি বুঝেই বাংলাদেশ যে স্পিন-নির্ভর বোলিং আক্রমণ সাজাবে, সেটি কদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু আফগানিস্তানও এশিয়ার আরেকটি দল, যাদের বোলিং আক্রমণও স্পিন-নির্ভর। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ‘অল স্পিন অ্যাটাকে’ গেল, স্কোয়াডে থাকা তিন পেসারকেই ড্রেসিংরুমে বসিয়ে রাখল (তিনজনই আছেন পানি টানার দায়িত্বে), এতে একটু অবাকই হয়েছেন অনেকে।
বাংলাদেশ দেশের মাঠে সবশেষ যে টেস্ট খেলেছে, মিরপুরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সে ম্যাচে পেসার-বিহীন বোলিং আক্রমণ নিয়েই নেমেছিল (খণ্ডকালীন পেসার সৌম্য সরকার বাদে)। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ‘পেস কোয়ার্টেট’ কিংবা ভারতের ‘স্পিন কোয়ার্টেটে’র উদাহরণ এসেছিল। তবে চার স্পিনার নিয়ে খেলার এ কৌশল নিয়ে অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে কম কথা শুনতে হয়নি। কাল সংবাদ সম্মেলনে যখন প্রসঙ্গটা আবার উঠল, বাংলাদেশ অধিনায়কের উত্তরটা হলো বেশ তীক্ষ্ণ, ‘যখন ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ায় খেলা হয়, চার পেসার খেলে, কোনো স্পিনার খেলে না, তা নিয়ে তো আমরা সমালোচনা করি না। মনে হয় না এসব নিয়ে চিন্তা করার কিছু আছে। আমাদের চিন্তা থাকবে ম্যাচটি জেতার।’
ম্যাচ জেতাই যখন শেষ কথা, বাইরের কথায় কান দিয়ে লাভ নেই, হাতে যত বিকল্প আছে সব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো—এটাই হচ্ছে অধিনায়ক সাকিবের নীতি। সেটি তিনি করছেনও। সাকিবের এই ভাবনাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন শাহরিয়ার নাফীস। জাতীয় দলের বাইরে থাকা এ বাঁহাতি ওপেনার চট্টগ্রামে এসেছেন ধারাভাষ্য দিতে। সকালে প্রেসবক্সে এসে চার স্পিনার নিয়ে খেলার যৌক্তিকতা নিয়ে বলছিলেন, ‘আগে আমাদের এত বিকল্প ছিল না। এখন আছে, দলে ভালো মানের স্পিনার আছে। আগে স্পিনার বলতে ছিলই (মোহাম্মদ) রফিক ভাই। এখন যেহেতু জয়ের পরিকল্পনা নিয়ে খেলতে নামে, হাতে যত অপশন আছে সব কাজে লাগাতে চায় অধিনায়ক।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে চার স্পিনার নিয়ে খেলে বাংলাদেশ টেস্ট জিতেছিল ইনিংস ও ১৮৪ রানে। এবার একই কৌশলে একই ফল পাওয়া যাবে কি না, সেটি নিয়ে একটু সংশয়—বাংলাদেশ যে টস হেরেছে। ক্যারিবীয়দের স্পিনে নাকাল করা গিয়েছিল, তারা এশিয়ার বাইরের দল আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশ টসটা জিতেছিল। এ ধরনের উইকেটে প্রথম ইনিংস আর নির্দিষ্ট করে বললে প্রথম দিনেই যে রান করার সুযোগ থাকে পরে সেটি খুব বেশি থাকে না। আর চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করার মানে মৃত্যুকূপে ঝাঁপ দেওয়া।
পরিসংখ্যান বলছে, চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে গড়ে ওঠে ৩৭১ রান, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৫৪, তৃতীয় ইনিংসে ২৩৪ আর চতুর্থ ইনিংসে ১৪৮। বাংলাদেশকে যদি চতুর্থ ইনিংসে ১৫০ রানও তাড়া করতে নামতে হয়, রশিদ-কায়েস-জহিরদের বিপক্ষে মোটেও সেটি সহজ হবে না। সাকিবও কাল বলছিলেন, ‘এশিয়ায় সব সময়ই টস অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়। বাড়তি সুবিধা থাকবে (জিতলে)।’ গত তিন বছর দেশের মাঠে টেস্টে যে সাজানো নকশার পিচ বানানো হচ্ছে, বাংলাদেশ অধিনায়কের কাছে সবচেয়ে বড় চাওয়া হয়ে উঠেছে—টস অবশ্যই জেতা চাই। না হলে যে চতুর্থ ইনিংসে এভারেস্ট পাড়ি দিতে হবে!
আজ বাংলাদেশ টস হেরে যাওয়ার পর শাহরিয়ার তাই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলছিলেন, ‘উইকেট অনেক শুকনো, হালকা ঘাস রেখেছে যেন প্রথম দিনে ভেঙে না যায়। প্রথম দিনে যা একটু ব্যাটিং করা যাবে। পরে কঠিন হয়ে যাবে। চতুর্থ ইনিংসে এখানে গড়ে ১৪৮ রান হয়েছে। প্রথম ইনিংসে আফগানিস্তান ভালো স্কোর করে ফেললে সমীকরণ কঠিনই হয়ে যাবে।’
টস হেরেছেন, স্পিনসর্বস্ব বোলিং আক্রমণ নিয়ে নেমেছেন। চতুর্থ ইনিংসে খেলতে হতে পারে বিশ্বমানের স্পিনারদের বিপক্ষে। সাকিবরা যখন কঠিন চ্যালেঞ্জে নেমেছেন, তখন ড্রেসিংরুমে সবচেয়ে নির্ভার থাকার কথা শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্টের। নতুন পেস বোলিং কোচ এসেই কদিন খুব খেটেছেন পেসারদের নিয়ে। পরশুও তাসকিন আহমেদ, আবু জায়দ আর ইবাদত হোসেনকে গুড লেংথে বোলিং করার অনেক টোটকা দিচ্ছিলেন। যা বোঝা গেল, শুধুই অনুশীলন করে যাওয়া। এই টেস্টে তাঁর বিভাগের কোনো ভূমিকা নেই!
অথচ কে বলবে অল স্পিন অ্যাটাকে যাওয়া বাংলাদেশ দলে স্পিন কোচই নেই! কিউই কিংবদন্তি ড্যানিয়েল ভেট্টোরি যোগ দেবেন নভেম্বরে ভারত সফরের আগে। আপৎকালীন কাজটা চালিয়ে নিচ্ছেন স্থানীয় কোচ সোহেল ইসলাম।