কাঁচা খেজুর রস মারণব্যাধি নিপাহর ঝুঁকি বাড়ায়
নিপাহ একটি মারণব্যাধি। এই রোগ নিপাহ নামক ভাইরাসের মাধ্যমে ছড়ায়। এ
ভাইরাসে আক্রান্ত হলে মৃত্যুহার ৭০ শতাংশ। নিপাহ ভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে
খেজুরের রস ফুটিয়ে পান করার পরামর্শ দিয়েছে জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ
ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদি সেব্রিনা
ফ্লোরা। তিনি বলেন, নিপাহ ভাইরাসের মূল উৎস খেজুরের রস। খেজুরের রস গাছের
মধ্যে হাঁড়িতে থাকা অবস্থায় বাদুড় ওই রস পান করে এবং পরে রসের মধ্যে
প্রস্রাব করে যায়। ওই রস না ফুটিয়ে কাঁচা পান করলে নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত
হওয়ার ঝুঁকি থাকে। রাজধানীসহ সারা দেশে মানুষের মধ্যে রস উৎসবের মাধ্যমে
আয়োজন করে কাঁচা খেজুরের রস পান করার প্রচলন রয়েছে। এতে মারণব্যাধি নিপাহ
রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ছে।
গতকাল সোমবার আইইডিসিআর কার্যালয়ে
নিপাহ ভাইরাস সংক্রমণ এবং অন্যান্য মৌসুমি রোগ সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক
অবহিতকরণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান বৈজ্ঞানিক
কর্মকর্তা ড. এস এম আলমগীর, সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা: মঞ্জুর হোসেন
খান ও ডা: শারমীন সুলতানা রোটা ভাইরাস, নিপাহ ভাইরাস, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও
সাধারণ সর্দিকাশি (কমন কোল্ড) বিষয়ক তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
বক্তারা
বলেন, নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত দেখা দেয় সাধারণ সর্দিজ্বর, নিপাহ ও
রোটা ভাইরাসের প্রদুর্ভাব। এ বিষয়ে জনগণকে এখন থেকেই সচেতন হওয়ার পরামর্শ
দেন তারা। আইইডিসিআরের পরিচালক জানান, নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত
রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের হার বেশি থাকে। মোট আক্রান্তের প্রায় ৮০ শতাংশই এই
সময় হয়। ছয় থেকে ২৪ মাস বয়সী শিশুরা সবচেয়ে বেশি রোটা ভাইরাসে আক্রান্তের
ঝুঁকিতে থাকে। খাবার খাওয়ার আগে উত্তমরূপে খাবার ধোয়া এবং হাত ধোয়ার
মাধ্যমে (ফুড ও হ্যান্ড হাইজিন) এই ভাইরাস থেকে মুক্ত থাকা যায়।
তিনি
জানান, শীতকালে বাংলাদেশে ইনফ্লুয়েঞ্জা হয় না। মূলত এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর
পর্যন্ত এই ভাইরাসে আক্রান্তের ঝুঁকি বেশি। সাধারণ সর্দিকাশি ছড়ায় হাঁচি
কাশির মাধ্যমে। সাধারণ সর্দিকাশি ও ইনফ্লুয়েঞ্জা এক নয়। নিপাহ ভাইরাসে
মানুষ আক্রান্ত হয় ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসের মধ্যে। নিপাহে আক্রান্তের
সংখ্যা খুব একটা বেশি না হলেও এতে মৃত্যের সংখ্যা অনেক। ২০০১ সাল থেকে ২০১৯
সাল পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ৩১৩ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ২১৭
জন। আক্রান্তদের মধ্যে মৃত্যের হার ৭০ শতাংশ।