কেন বাংলাদেশে চামড়া এত মূল্যহীন হলো?
Collected:
—————-
সৈয়দ মবনু
—————-
চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পেয়ে সংশ্লিষ্ট অনেকই ক্ষুব্দ। কোন কোন মাদরাসা বকেয়া বেতন কিংবা বিল পরিশোধের ভাবনায় কিংকর্তব্য বিমূঢ়। কোন কোন মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ক্ষুব্দ হয়ে প্রতিবাদ হিসাবে নিজেদের সংগ্রহকৃত চামড়া বিক্রি না করে রাস্তায় ফেলে চলেগেলেছেন। সিলেটের দারুস সালাম মাদরাসা প্রায় সাড়ে আট শ চামড়া রাস্তায় ফেলে চলে যায় এবং সুনামগঞ্জের সৈয়দপুর মাদরাসা ৭৪৫টি চামড়া মাটিতে পূতে রাখে। কিছু কিছু মাদরাসা বিশ টাকা-ত্রিশ টাকা মূল্যে বিক্রি করে বলেও জানা যায়। অথচ একটি চামড়া সংগ্রহে কমপক্ষে ৫০টাকা গড়ে খরচ হয়েছে কর্তৃপক্ষের, যদি দাতারা তা ফ্রি দিয়েছেন। প্রশ্ন হলো এমন কেন হলো, এক সময় তো বারো-চৌদ্দ শ টাকাও একেকটি চামড়া বিক্রি হয়েছে? চামড়া শিল্পের এই অধপতনের মূল রহস্য কি?
এই প্রশ্নের উত্তর একেকজনের কাছে একেক রকম। সকল উত্তরেই কিছু সত্যতা আছে, আবার কিছু আছে ভুল ধারণা। বেশিরভাগে বলছেন, টেনারীর মালিকদের ইবলিসি সিন্ডিকেটের কথা। কেউ কেউ চিহ্নিত করছেন সরকার এবং টেনারী মালিকদের মধ্যকার কিছু মানুষের ষড়যন্ত্রের জায়গাটি। কেউ কেউ বলছেন, ইসলামের শত্রুরা সিন্ডিকেট করে চামড়া শিল্পকে নিয়ন্ত্রণ করেছে দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংসের জন্য। কারণ, এদেশের দ্বীনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো প্রধান আয়ের একটি উৎস কোরবানির চামড়া। কেউ কেউ বুঝে-না বুঝে বলছেন আরও অনেক কথা। সবগুলো কথাকে আমরা গুজব বলতে না পারলেও কিছু কথা অবশ্যই গুজব রয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে আলোচিত সমস্যাকে একেবারে ফালতু বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। মানুষের বক্তব্যগুলোর মধ্যেই কিছু মৌলিক সমস্যা লুকিয়ে রয়েছে।
এই সমস্যা থেকে উত্তির্ণের পথ কি? বিষয়টি নিয়ে অনেকেই ভাবছেন। অনেকে নিজেদের মতো করে সমাধানের পথ ও পদ্ধতিও উল্লেখ করে বক্তব্য দিচ্ছেন। অনেকের বক্তব্য অভিজ্ঞতার অভাবে সুপরিকল্পিত না হলেও একেবারে ভিত্তিহীন নয়। সবার বক্তব্যকে জ্ঞান-বুদ্ধির ভিত্তিতে একত্রিত করে কর্মে নিতে পারলে অনেক সমস্যারই সমাধান আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। অনেকের বক্তব্য বেশ গোচালোও রয়েছে। আমার বাল্যবন্ধু আমিনুল ইসলাম শামীম সিলেট শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেমিষ্টিতে মাস্টার্স শেষ করে দীর্ঘদিন বিখ্যাত জুতা কোম্পানী বাটা’র ঢাকা অফিসের কোয়ালিটি কনসালটেন্ট এবং কিছুদিন সে এপেক্স-এর ঢাকা অফিসের কোয়ালিটি কনসালটেন্ট ছিলো। কিছুদিন সে বাংলাদেশ টেনারী মালিক এসোসিয়েশনের উপদেষ্টার দায়িত্বও আদায় করেছে। কোরবানির ঈদ উপলক্ষে সে সিলেট এসেছে। ঈদের পরদিন ১৩ আগষ্ট ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ জুহরের নামাজ আমরা দু’জন একসাথে মহল্লার মসজিদে পড়ি। নামাজ শেষে বেরিয়ে দেখি মসজিদের সামনে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়ি দাঁড়িয়ে, ওরা শাহী ঈদগাহ হাজী গাজী শাহ মীরাজী মাদরাসা কর্তৃক সংগ্রহকৃত চামড়া ফেলে দেওয়ার জন্য নিয়ে যাবে। অনুমানিক দু শ চামড়া হবে। এই চামড়া মাদরাসার ছাত্ররা ঈদের দিন বাড়িতে না গিয়ে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করেছে, আর ন্যায্যমূল্যের অভাবে তা এখন যাচ্ছে সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িতে। সিটি কর্পোরেশনের যে লোকটি এই ময়লা নিতে এসেছেন তাকে জিজ্ঞাস করলাম, এগুলো কি করবেন? সে বেশ স্মাটম্যান, বললো, এগুলো মাজারে যাবে। আমি ভেবে পাই না মাজার কি? শামীম এই লাইনের লোক, সে জানে মাজার অর্থ টেনারী। সিটি কর্পোরেশন এগুলো কোন টেনারীকে দিয়ে দিবে। আমি বললাম, তা হলে তো মাদরাসা কর্তৃপক্ষ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও টেনারীর মালিক লাভমান হবে। সে তো সম্ভবত এগুলো বিনামূল্যে পেয়ে যাবে? শামীম মুচকি হেসে বললো, এখানেই তো খেলা। আমি বললাম, খেলাটা একটু বুঝাও বন্ধু, আমি তো বুঝি না? শামীম বললো, বসে বলতে হবে। চলো কোথাও বসা যাক। এই গল্প করতে করতে চলে আসি আমাদের বাসায়। পান-ক্যাফির ফাঁকে চামড়া শিল্প নিয়ে শামীম যা বললো তা থেকে আমি বুঝতে পারি চামড়া নিয়ে যা হচ্ছে তা কিছুটা কারো কারো ষড়যন্ত্র হলেও মূলত সমস্যা হচ্ছে পদ্ধতিগত। তবে সিন্ডিকেটের দুষ্টামীর বিষয়কে একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। কারণ, তারা চামড়াকে যেভাবে মূল্যহীন প্রমাণের চেষ্টা করেছে প্রকৃত অর্থে চামড়া তত মূল্যহীন নয়। চামড়া থেকে যে ওয়েস্টেজ বের হয় তা দিয়ে একদল পোলট্রিতে ফুড তৈরি করছে, যদিও তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এখন প্রশ্ন হলো, পোলট্রির দশ কেজি পুটিনের মূল্য কত? দশ কেজি চামড়ার দশ কেজি পুটিনের মূল্য কম হলেও ৫০০ টাকা হবে। এখন প্রশ্ন হলো, একটি গরুর চামড়ার ওজন কতটুকু? সামুদ্রিক সুটকির ওয়েস্টেজ দিয়ে পোলট্রির যে পুটিন তৈরি করা হয় তা থেকে শতগুণ উন্নত পুটিন হচ্ছে চামড়ার তৈরি পুটিন। সুটকির ওয়েস্টেজের মূল্য কেজি দেড় থেকে দু শ টাকা হলে চামড়ার পুটিনের মূল্য কত হওয়া উচিৎ? চামড়া যদি পুটিনের জন্য খরিদ করা হতো তবু তো পঞ্চাশ-ষাট টাকা মূল্য হতে পারে না। আমাদের মূর্খতার সুযোগে এবং পরিকল্পনাহীনতায় একদল অসাধু টেনারীর মালিক সুবিধা আদায় করে নিচ্ছে। এর ফলে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাদরাসা এবং এতিমখানাগুলো। তবে যে হারে ব্যাপকভাবে মাদরাসাগুলোর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে কেউ কেউ প্রচার করছেন তার সাথে পূর্ণাঙ্গ একমত হওয়া যাচ্ছে না শামীমের বক্তব্য থেকে। কারণ এখানে মূল সমস্যা অন্য জায়গায় রয়েছে। বিশ্বের যে সকল দেশ চামড়া আমদানী করে তারা চায় চামড়া যে স্থান থেকে আমদানী করা হয় সেই স্থান পরিবেশ বান্ধব হতে হবে। তাই প্রত্যেক টেনারীর থাকতে হবে আন্তর্জাতিক মানের পরিবেশ বন্ধব সার্টিফিকেট : central effluent treatment plant (C E P T)। বিশ্বে দীর্ঘদিন চীন প্রায় এককভাবে চামড়া রফতানি করেছে। চীন বাংলাদেশ থেকে যখন চামড়া সংগ্রহ করতো তখন বাংলাদেশের চামড়ার মূল ছিলো অনেক। বিশ্ব যখন দেখলো চীন পরিবেশ বান্ধব সার্টিফিকেটে দুই নম্বারী করছে কিংবা অন্য কারণে আন্তর্জাতিক বাজার চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে দ্বিতীয় এরেকটি বাজার তৈরি করতে চাইলো। অনেক ব্যবসায়ির দৃষ্টি তখন বাংলাদেশের দিকে ছিলো। কারণ, বাংলাদেশে প্রচুর চামড়া সংগ্রহকৃত হয় এবং শ্রমিকের মূল্য কম। বিশ্বের চামড়া ব্যবসায়িরা চাইলো বাংলাদেশ চামড়া রপ্তানীতে এগিয়ে আসুক C E P T সার্টিফিকেট সহ। ২০০৮-২০০৯ খ্রিস্টাব্দের দিকে চামড়া শিল্পকে আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট-এর মানে নিয়ে যেতে বাংলাদেশ ব্যাংক ৯০০ কোটি টাকার অনুদান দিলো। তিনজন ব্যক্তির মাধ্যমে এই টাকা ব্যয় করা হলো,
১. জগমোহন ডাল মিয়া (যিনি ভারতের বিশিষ্ট ক্রিকেট প্রশাসক ছিলেন। ছিলেন ভারত ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ভারতীয় ক্রিকেট নিয়ন্ত্রণ বোর্ড ও বঙ্গীয় ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। এছাড়া তিনি কলকাতা শহরে একজন ব্যবসায়ী হিসেবেও পরিচিত ছিলেন। ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান), ২. মঈন উদ্দিন-ফখর উদ্দিন তত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা গিতিয়ারা সাফিয়া, ৩. ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সেলটেক-এর মালিক।
তারা বাংলাদেশের চামড়া শিল্পকে পরিবেশ বান্ধব করতে একদিকে সাভার উন্নতমানের টেনারী স্থাপনের পরিকল্পনা করলেন অন্যদিকে ‘ফেরা সালফেট’ (চামড়া সংরক্ষনের লবন) ভারত থেকে আনতে হবে বলে আসামে একটি সেন্টার তৈরি করলেন। এগুলো ছিলো তত্বাবধায়ক সরকারের সময়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই দীর্ঘদিনেও বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সার্টিফিকেট লাভের যোগ্যতা সম্পন্ন টেনারী তৈরি করতে পারেনি। সরকারের কোটি কোটি টাকার প্রজেক্ট সাভারে অকেজু হয়ে পরে আছে, তারাও সার্টিফিকেট অর্জনের মানে পৌঁছতে পারেনি। ফলে আমাদের চামড়া রপ্তানির বাজারে মূল্যহীন হয়ে আছে। আমাদের যারা পাঁকা চামড়া রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান তারা আশি থেকে নব্বাইভাগ চামড়া সংগ্রহ করেন ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভারত, পাকিস্তান, চীন ইত্যাদি দেশের সার্টিফিকেটদারী টেনারী থেকে। তারাও এই সার্টিফিকেটের অভাবে বাংলাদেশী টেনারী থেকে খরিদ করতে পারেন না।
শামীমের কাছে জানতে চাইলাম, সাভারের টেনারী কেন এক্ষেত্রে সফল হলো না? সে বললো, সেই সময় টেনারী মালিক এসোসিয়শনের সভাপতি ছিলো শাহীন। তিনি আমার কাছে জানতে চাইলেন এই প্রজেক্টের লাভ-ক্ষতি। আমি তখন বলেছিলান, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ি অগ্রসর হলে প্রতি স্কোয়ার ফুটে খরচ হবে পাঁচ-ছয় টাকা আর আরেকটু পরিকল্পিতভাবে করলে খরচ হবে পচাত্তর পয়সা। তাদের তো উদ্দেশ্য প্রথম থেকেই সৎ ছিলো না। তারা তো শুধু প্রজেক্ট তৈরি করে টাকা মারার চিন্তায় ছিলেন।
আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসার পর হোটেল শেরাটনে পরিবেশ সাংবাদিকদের এক বৈঠকে টেনারী এসোসিয়েশনের প্রতিনিধি হয়ে আমাকে সেই বৈঠকে গিয়ে বক্তব্য দেওয়ার সুযোগ হয়েছিলো। সেদিন আমি এই প্রজেক্টের লাভ ক্ষতির বর্ণনা দিয়েছিলাম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক আতিয়ার রহমান। তিনি আমাকে একা ডেকে আবার লাভ-ক্ষতির কথা প্রশ্ন করেন। আমি বলি, তাদের পরিকল্পনা ক্যামেস্টি বুঝে এমন যে কারো সামনে রাখলেই আপনি লাভ-ক্ষতির পরিমাণ বুঝতে পারবেন। তিনি মুচকি হাসেন। প্রকৃত অর্থে কোথাও কোন কাজ হচ্ছে না, শুধু পরিকল্পনাই হচ্ছে কাগজ-পত্রে। পরিবেশ বান্ধব সার্টিফিকেট না থাকায় এপেক্স ৯০ভাগ চামড়া খরিদ করে রাশিয়া থেকে, যার মূল্য হয় ৭০ টাকা স্কোয়ার ফুট। আগে তা বাংলাদেশী চামড়া দিয়ে চালানো যেত, কিন্তু সেই সার্টিফিকেটের অভাবে চালানো যায় না। মাল যদি রপ্তানি না হয় তবে আমদানী করে লাভ কি? তাই প্রথমে রপ্তানিযোগ্য পরিবেশ বান্ধব চামড়ার টেনারী তৈরি করতে হবে এবং তা করতে হবে সরকারী উদ্যোগে।
আমি শামীমের কাছে জানতে চাইলাম, সমস্যা থেকে
উত্তীর্ণের পথ কি? সে বললো, উত্তীর্ণের পথ দুটি, প্রথম হলো. সরকারের
সুচিন্তিত পদক্ষেপ নিতে হবে। লোক দেখানোর পদক্ষেপ নিলে হবে না। দ্বিতীয়
হলো, নিজেরা সচেতন হয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। আমি জানতে চাইলাম, আন্তর্জাতিক
বাজারে বাংলাদেশের চামড়া রপ্তানি করা সম্ভব কি? সে বললো, বাংলাদেশের জুতার
কারখানাতে যে ফিনিস বা পাঁকা চামড়া ব্যবহার করা হয় তা আন্তর্জাতিক
ব্যান্ডের কোম্পানীগুলোতে চাহিদা রয়েছে। তারা শুধু চায় লেদার পরিবেশ বান্ধব
কারখানা। বাংলাদেশে পরিবেশ বান্ধব কারখানা আমরা এখনও গড়তে পারিনি। এটাই
চামড়া রপ্তানিতে আমাদের মূল সমস্যা। এখন যদি রপ্তানী না হয় তবে টেনারীগুলো
সারাদেশ থেকে চামড়া আমদানী করে কি করবে?
আমি শামীমের কাছে জানতে
চাইলাম, তা হলে কি চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে? সে বললো, ধ্বংস হবে কেন?
সবাই সচেতন হলেই তো সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। চামড়া প্রসেসিং-এ চারটা স্তর
রয়েছে। সেগুলো বুঝে পদক্ষেপ নিতে পারলেই চামড়ার ব্যবসাকে ধরে রাখা সম্ভব;
১. কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ, যা করতে হয় লবন লাগিয়ে। এই কাজটা আমরা যারা চামড়া
সংগ্রহ করি তারা নিজেরাই করতে পারি। কাঁচা চামড়ায় লবন লাগানো জানা থাকলে তা
ছয় মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ২. ওয়েট ব্লু মেনোফ্যাকচারি, যা করতে
পারলে চামড়া দু থেকে আড়াই বছর পর্যন্ত নষ্ট হয় না। ৩. ফিনিস লেদার অর্থাৎ
কাঁচা চামড়াকে পাঁকা করা। ৪. লেদার প্রোডাক্ট, অর্থাৎ লেদার দিয়ে কিছু তৈরি
করা।
যদি কোন মাদরাসা কাঁচা চামড়াকে লবন লাগিয়ে সংরক্ষণ করতে পারে তা
হলে তাদের আর বিক্রির জন্য রাতারাতি চেষ্টা করতে হবে না। তারা ছয় মাস
বাজার দেখে মাল বিক্রি করতে পারবেন এবং বেশি মূল্য পাবেন। ্আর যদি ওয়েট
ব্লু অর্থাৎ লবন লাগিয়ে ব্লু রঙ-এ রূপান্তরিত করতে পারেন তবে আড়াই বছর
সংরক্ষণ করা সম্ভব। বাজার একেবারে দেখে তা বিক্রি সম্ভব। আর যদি তা ফিনিস
লেদার অর্থাৎ চামড়াকে সুটকি বানিয়ে নিতে পারেন তবে তো আর টেনারীর কাছে
বিক্রি করতে হবে না, তখন যারা চামড়ার মাল তৈরি করে তারাই খরিদ করে নিবে
প্রোডাক্ট তৈরির জন্য। আর যদি নিজেরা প্রোডাক্ট তৈরি করে বাজারে নিয়ে আসতে
পারেন তবে তোর আর কথাই নেই। স্মরণ রাখতে হবে, এক ফিট ফাঁকা চামড়ার মূল্য
আন্তর্জাতিক বাজারে ৩০০টাকা। একটা জুতা তৈরিতে যদি দশ ডলার খরচ হয় তার
মধ্যে চার ডলার যায় চামড়ায়। তা হলে চামড়ার মূল্য হ্রাস পাওয়ার তো কোন কারণ
নেই। শুধু আমাদের জ্ঞান, বুদ্ধি, কর্ম এবং প্রেমের সমন্বয়ের অভাব। এ থেকে
উত্তির্ণ হতে হবে।
শামীমের কাছে জানতে চাইলাম, মাদরাসাগুলো এখন কি
চামড়া সংগ্রহ বাদ দিয়ে দিবে? সে বললো, কেন? প্রতিটি মাদরাসার ছাত্রদেরকে
চামড়া সংরক্ষণের উপর প্রশিক্ষণ দিয়ে তা আরও ব্যাপকভাবে সংগ্রহ করে এই
ব্যবসায় একক কর্তৃত্ব নিয়ে আসতে পারে মাদরাসাগুলো। তখন টেনারী মালিকগণ
হুজুরদের পায়ে ধরে নিজেদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে হবে।