নিজের চিকিৎসায় অস্ত্রোপচার উদ্ভাবন
সিএনএন, কানসাস২৯ জুলাই ২০১৯, ১২:৩৪

ডগ লিন্ডসেনিজের দুরারোগ্য রোগ সারাতে একজন মানুষ সর্বোচ্চ কী করতে পারে? অর্থ জোগাড় করে বিশ্বের সবচেয়ে নামী হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ছাড়া খুব বেশি কিছু করার থাকে না অধিকাংশেরই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যের কানসাস শহরের ডগ লিন্ডসেকে ব্যতিক্রমই বলতে হবে। তিনি নিজের দুরারোগ্য রোগ সারাতে চিকিৎসাবিজ্ঞানে নতুন একটি অস্ত্রোপচার পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন।
১৯৯৯ সালের কথা। লিন্ডসে তখন সবে ২১ বছরের তরুণ, কানসাসের রকহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞানে স্নাতক শেষ বর্ষে পড়ছেন। একদিন বাড়িতে খাবার টেবিল থেকে হঠাৎ মাথা ঘুরে পড়ে গেলেন। আর উঠে দাঁড়াতে পারলেন না। সেই থেকে টানা ১১ বছর শয্যাশায়ী ছিলেন। চিকিৎসকেরা জানালেন, দুরারোগ্য অজ্ঞাত ব্যাধিতে আক্রান্ত লিন্ডসে। তাঁকে বিছানায় শুয়েই বাকি জীবন কাটাতে হবে।
লিন্ডসে বুঝে গেলেন, মায়ের রোগে ধরেছে তাঁকেও। লিন্ডসের যখন মাত্র ১৮ মাস বয়স, তাঁর মা-ও একদিন হঠাৎ এমন দুর্বল হয়ে গেলেন। ছোট্ট লিন্ডসেকে কোলেও নিতে পারেননি আর।
পরীক্ষায় জানা গিয়েছিল, তাঁর মায়ের সমস্যা থাইরয়েডে। তবে চিকিৎসা আর এগোয়নি। লিন্ডসের খালারও এমন রোগ হয়েছিল। লিন্ডসের এই রোগের কারণে রকহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁর ছাত্রত্ব বাতিল করল। একদিন মাথায় জেদ চাপল, নিজের রোগটি কী, তা জেনে ছাড়বেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়লার বাক্সে পড়ে থাকা একটি ২২০০ পৃষ্ঠার এন্ডোক্রাইনোলজির বই তুলে আনলেন। চলল পড়াশোনা। অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির সমস্যা থেকে থাইরয়েডে সৃষ্ট একটি সমস্যার একটি অনুচ্ছেদে থমকে গেলেন। সমস্যাটির সঙ্গে তাঁর রোগের মিল রয়েছে। লিন্ডসের অনুমান হলো, এ থেকেই তাঁর স্নায়ুতন্ত্র অকেজো হয়ে থাকতে পারে। এরপর একটি আন্তর্জাতিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের সম্মেলনে যোগ দিলেন।
সম্মেলনে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়, মার্কিন জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের সবাই লিন্ডসের উপস্থাপনায় মাথা নাড়লেন, ‘অসম্ভব, এ হবার নয়।’ শুধু আলাবামা-বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক সিসেল কফল্যান তাঁকে সঙ্গ দিলেন। কফল্যান অনুমান করলেন, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে টিউমার হয়েছে নিশ্চিত। পরপর তিনটি পরীক্ষা জানাল, টিউমার হয়নি। লিন্ডসের মাথায় এল, অ্যাড্রিনাল গ্রন্থিতে এমন একটা কিছু রয়েছে, যা টিউমারের মতো। চতুর্থ পরীক্ষায় শনাক্ত হলো, বাইল্যাটারাল অ্যাড্রিনাল মেডুলারি হাইপারপ্লেসিয়া। অর্থাৎ অ্যাড্রিনাল গ্রন্থির ভেতরের অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দিলে সমাধান হতে পারে।
আবার চিকিৎসকদের বাগড়া! এ অস্ত্রোপচার আগে হয়নি। লিন্ডসে বইয়ে খুঁজে পেলেন, এ রোগের ৩২টি রেকর্ড রয়েছে। তবে অন্য প্রাণীর ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার হলেও মানুষে এর আগে হয়নি। লাইসেন্স হারানোর ভয়ে কোনো শল্যবিদ রাজি হলেন না। এগিয়ে এলেন বন্ধু কফল্যান। আলাবামা-বার্মিংহাম বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে হলো প্রথম অস্ত্রোপচার। তারপর ২০১২ সালে হলো দ্বিতীয় অস্ত্রোপচার। লিন্ডসে উঠে দাঁড়াতে পারলেন, বন্ধুর সঙ্গে ঘুরতে গেলেন বাহামায়। জীবনে প্রথমবার দেখলেন সমুদ্র। লিন্ডসের এখন ৪১ বছর বয়স। রকহার্স্ট বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে জীববিজ্ঞানে স্নাতক ঘোষণা করেছে।