ভাত খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন

সব ধরনের তরকারি দিয়ে পরিমিত ভাত খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। ছবি: প্রথম আলোইদানীং দেখা যাচ্ছে, অনেকে ওজন কমানোর জন্য খাদ্যতালিকা থেকে ভাত, দুধ, ডিম ইত্যাদি খাবার বাদ দিয়ে দিচ্ছেন। বিশেষ করে টিন এজ বা অল্প বয়সী ছেলেমেয়েরা। ভাতের পরিবর্তে তারা জাংক বা ফাস্ট ফুডের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে, যা ভাতের তুলনায় আরও বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার।
ক্যালরির হিসেবে যদি আমরা দেখি তাহলে দেখা যাবে, ১ কাপ ভাত থেকে ১৫০
ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। অন্যদিকে ১ কাপ পোলাও থেকে ৩০০ এবং ১ কাপ
বিরিয়ানি থেকে ৫০০ ক্যালরি পাওয়া যায়। একইভাবে রুটির পরিবর্তে পরোটা,
ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, লুচি-পুরি, শর্মা ইত্যাদি বেশি ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার।
আমাদের
মনে রাখতে হবে, ওজন বাড়ার পেছনে মূলত পরিমাণে বেশি খাবার খাওয়া, বেশি
ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া এবং ক্যালরি খরচ না করা অর্থাৎ শারীরিক পরিশ্রম
না করা দায়ী। প্রতিদিন যদি কেউ ১০০ ক্যালরি বেশি খাবার খায়, তাহলে তাকে
২০-২৫ মিনিট দ্রুত হাঁটতে হবে। এতে শরীরে ক্যালরি জমার ঝুঁকি কম থাকবে।
নইলে বছর শেষে ৪-৫ কেজি ওজন বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
অনেকেই বলতে পারেন, স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ভাত বাদ দিলে ক্ষতি কী? ক্ষতি
আছে। নিয়ম হলো, শরীরের শক্তি চাহিদার অর্ধেক আসতে হবে শর্করাজাতীয় খাবার
থেকে। আর আমাদের দেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের স্বাভাবিক বা সহজ শর্করার উৎস
ভাত। শর্করা না খেয়ে আপনি প্রোটিন বা অন্যান্য যে খাবারই খান না কেন, তা
সঠিকভাবে শরীরে কাজ করবে না। যদি স্নেহজাতীয় বা সোজা কথায় তেলজাতীয় খাবার
খান, তাহলে লিভার, রক্ত ও শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকবে। শর্করা জাতীয়
খাবার না খেলে আপনার শরীরের ওজন সাময়িকভাবে কিছু কমবে ঠিকই, কিন্তু
পাশাপাশি শারীরিক দুর্বলতা, কাজের ক্ষমতা কমে যাওয়া, আলস্য ও ঘুম ঘুম ভাব
বাড়তে থাকবে, যা দীর্ঘ মেয়াদে আপনার শরীরের জন্য খারাপ ফল বয়ে আনবে। সে
কারণে ওজন কমানোর জন্য ভাত খাওয়া বাদ দেওয়াটা কোনো ফল বয়ে আনবে না।
পরিমাণমতো
পারিবারিক খাবার খেয়েও আপনি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন বা কমাতেও পারেন।
সকালে রুটি বা মুড়ি, সঙ্গে ডিম, সবজি ইত্যাদি খান। দুপুরে ভাত, সঙ্গে
শাকসবজি, মাছ, ডাল বা এ রকম স্বাভাবিক খাবার খান। রাতে রুটি বা ভাত খান
পরিমাণমতো। সঙ্গে যেকোনো শাকসবজি, মাছ, ডাল, লেবু, সালাদ ইত্যাদি খান। বয়স,
পরিশ্রম করার ধরন এবং শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করবে খাবারের পরিমাণ।
তবে সারা দিনের খাবারকে তিন বেলায় না খেয়ে একই খাবার আপনি ৬ ভাগে ভাগ করে
খেতে পারেন। বেশি খেয়ে ফেললে শারীরিক পরিশ্রম করুন।
বাংলাদেশের প্রধান খাবার ভাত। ‘ডাল-ভাত’ খাওয়া বাঙালির অভ্যাস। ডাল-ভাতের সঙ্গে বিভিন্ন সবজি, মাছ খাচ্ছি আমরা শত শত বছর ধরে। এটি আমাদের সঙ্গে মানিয়ে গেছে সুন্দরভাবে। কাজেই পারিবারিক এসব খাবার নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। শুধু পরিশ্রমের পরিমাণ বাড়িয়ে দিন। আর পরিমিত খাবার খান।
লেখক: প্রধান পুষ্টিবিদ ও বিভাগীয় প্রধান, পুষ্টি বিভাগ, বারডেম হাসপাতাল।