রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা কমাতে যে ৫টি কাজ করবেন।

মানুষের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়তে থাকে। যাদের বয়স ২০ বছর বা তার বেশি, তাদের রক্ত প্রতি পাঁচ বছর অন্তর একবার রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা পরীক্ষা করে দেখা উচিত। যদি রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয় কিংবা কম ঘনত্বের লিপোপ্রোটিন কোলেস্টেরলের (ক্ষতিকর কোলেস্টেরল) মাত্রা ১০০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হয়, তাহলে সতর্ক হোন। শারীরিক পরিশ্রম বৃদ্ধি করুন এবং তেল চর্বিযুক্ত ও ভাজা পোড়া খাবার বর্জন করুন। সাধারণ জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করে এবং প্রয়োজন হলে ওষুধ সেবন করে ছয় সপ্তাহের মধ্যে এগুলোর পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় আনা যায়। রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে রাখা কঠিন কাজ নয়। সহজ কৌশল অনুসরণ করা যেতে পারে। পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়ায়। জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। নৈশভোজের পর কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করেন, তাহলে উপকৃত হবেন।

কোলেস্টেরলের কাঙ্ক্ষিত মাত্রা নির্ধারণ :

আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে আপনার শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কত এবং আপনি কতটুকু কমাতে চান। এটা অনেক উপাদানের ওপর নির্ভর করে। যেমন- পরিবারের বাবা-মায়ের হৃদরোগের ইতিহাস আছে কিনা এবং আপনার হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি আছে কিনা, যেমন_ উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ধূমপানের অভ্যাস, অতিরিক্ত মেদভুঁড়ি ইত্যাদি। যাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, তাদের কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল/ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা ৭০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে থাকা উচিত। আর যাদের হৃদরোগের কোনো ঝুঁকির উপাদান নেই, তাদের ১৬০ মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের নিচে রাখা যেতে পারে।

প্রয়োজনে ওষুধ সেবন করতে হবে :

যাদের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি তাদের অবশ্যই জীবনাচরণ পদ্ধতি পরিবর্তন করতে হবে। কিন্তু যদি হৃদরোগের নমুনা থাকে, তাহলে কোলেস্টেরল কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে ধূমপান পরিহার করা, ওজন কমানো যেমন জরুরি, তেমনি ওষুধ সেবন করাও প্রয়োজন। জীবনাচরণ পদ্ধতির পাশাপাশি কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ সেবন করলে রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসে। কোলেস্টেরল কমানোর জন্য নানা রকম ওষুধ ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন- নিয়াসিন, ফাইব্রেটস, স্টেটিনস ইত্যাদি। স্টেটিন রক্তের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল ২০ থেকে ৫০ শতাংশ কমাতে পারে।

হাঁটুন এবং ব্যায়াম করুন :

শারীরিক পরিশ্রম ও ব্যায়াম শুধু রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় না, উপকারী কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১০ শতাংশ বাড়ায়। জোরে হাঁটলেও এমন উপকার পাওয়া যায়। নৈশভোজের পর কমপক্ষে ৪৫ মিনিট হাঁটুন। কেউ যদি প্রতিদিন সিঁড়ি বেয়ে ওঠানামা করেন, তাহলে উপকৃত হবেন। আর যদি কেউ অফিসে চাকরি করেন, তার উচিত অন্তত প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিট হাঁটা, চলাফেরা করা। আপনি যে ধরনের ব্যায়াম করুন না কেন, তা নিয়মিত করতে হবে।

চর্বিজাতীয় খাবার পরিহার করুন :

কোলেস্টেরল কমানোর সহজ উপায় হচ্ছে ডিমের কুসুম এবং অন্যান্য বেশি কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার পরিহার করা। তবে খাবারের কোলেস্টেরলই রক্তে কোলেস্টেরল বাড়ানোর জন্য শুধু দায়ী নয়। সম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন_ মাখন, চর্বিযুক্ত গরু ও খাসির মাংসের পরিবর্তে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার যেমন সয়াবিন তেল, সূর্যমুখী তেল, জলপাইয়ের তেল, মাছ পর্যাপ্ত খাওয়া উচিত।

স্বাস্থ্যকর খাবার বেশি করে খান :

সবজি এবং ফলমূল শরীরের জন্য উপকারী। এগুলো রক্তে কোলেস্টেরলও কমায়। দ্রবণীয় অাঁশ পরিপাকনালি থেকে স্পঞ্জের মতো কোলেস্টেরল শুষে নেয়। শিম, বার্লিতে প্রচুর আশ থাকে। বেশি করে মাছ খান। মাছ ও মাছের তেল কোলেস্টেরল হ্রাস করে। এর মধ্যে ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটি রক্ত থেকে কোলেস্টেরল এবং অন্যান্য ক্ষতিকর চর্বি কমিয়ে ফেলে। সবার সপ্তাহে অন্তত দুই থেকে তিনবার মাছ খাওয়া উচিত। অধিকাংশ মাছেই ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড থাকে। মাছে অনিচ্ছুকরা মাছের তেল থেকে তৈরি ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ ক্যাপসুল চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সেবন করতে পারেন। বিভিন্ন উদ্ভিদজাত খাবারেও ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড পাওয়া যায়। যেমন_ সয়াবিন তেল, কাঠবাদামের তেল ইত্যাদি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

seo